সম্প্রতি পুরুলিয়া জেলার কাশীপুর ব্লকের বড়রা পঞ্চায়েতের পলসড়া মৌজার ৩৫৪২ নম্বর প্লটে অবস্থিত ধনারডি মাচান পাহাড় কাটার অনুমতি একটি বেসরকারি সংস্থাকে দিয়েছে রাজ্যের সংস্থা, ‘মাইনস্ অ্যান্ড মিনারেল ডেভেলপমেন্ট ট্রেডিং কর্পোরেশন লিমিটেড’। পাহাড় কাটার সরকারি সিদ্ধান্তে অখুশি এলাকার আদিবাসী বাসিন্দারা। পাহাড় কাটার বরাত পাওয়া সংস্থাটি কাজ শুরু করতেই গত শনিবার (১৬ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩) স্থানীয় আদিবাসীরা দলবেঁধে মিছিল করে ধনারডি মাচান পাহাড়ের প্রকল্পস্থলে গিয়ে পাহাড় কাটার কাজ বন্ধ করে দেন।
পাহাড় বাঁচাতে আদিবাসীরা গড়ে তুলেছেন ‘পলসড়া (ধনারডি) পাহাড় বাঁচাও কমিটি’। এই কমিটির নেতৃত্বে দুশোর বেশি পুরুষ-মহিলা মিছিল করে প্রকল্পস্থলে যান। সেখানে তখন পাহাড়ের একাংশ কেটে পাথর বার করার কাজ চলছিল। কমিটির লোকজন কাজ বন্ধ করে মাটি কাটার যন্ত্র-সহ অন্য গাড়িগুলিকে ফেরত পাঠিয়ে দেন।
পাহাড় বাঁচাও কমিটির সম্পাদক সত্যজিৎ মুর্মু বলেন, “এই পাহাড়ের সঙ্গে আদিবাসী সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ভাবাবেগ জড়িত। এ ছাড়া, পাহাড় কেটে ফেললে এলাকার প্রাকৃতিক ভারসাম্যও নষ্ট হবে। উন্নয়নের নামে পাহাড় ধ্বংসের চেষ্টা আমরা মানব না।” কমিটির সভাপতি জয়ধন মান্ডিরও দাবি, আট বছর আগে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, আদিবাসী সম্প্রদায়ের আপত্তি থাকলে পাহাড় কাটা যাবে না। তার পরে রাঙ্গুনিগোড়া পাহাড় কাটার কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তাঁর প্রশ্ন, ফের কী ভাবে আবার পাহাড় কাটার অনুমতি দেওয়া হল। কমিটির লোকজনের আরও অভিযোগ, পাহাড় কেটে পাথর বার করতে বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে। তাতে ধনারডি গ্রামের চার জন অসুস্থ হয়েছে।
অন্যদিকে পাহাড় কাটার বরাত পাওয়া সংস্থাটির কাশীপুরের ওই প্রকল্পের সাইট ইনচার্জ সৌমেন চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, “অনুমতি পাওয়ার পরে কাজ শুরু হয়েছিল। সরকারি নিয়ম মেনে কাজ চলছিল। তবে স্থানীয় কিছু লোকজনের বাধায় কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। গোটা ঘটনা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।” কাশীপুরের বিডিও সুপ্রীম দাস জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সমস্ত বিষয়টি জানানো হয়েছে। প্রসঙ্গত বছর আটেক আগে বড়রা পঞ্চায়েতের ওই এলাকাতেই পাহাড় রক্ষার দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলনে শামিল হয়েছিলেন স্থানীয় আদিবাসী মানুষজন। সে সময়ে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে বন্ধ করে দেওয়া হয় রাঙ্গুনিগোড়া পাহাড় কাটার কাজ।