লিখেছেন – প্রদীপ কুমার হাঁসদা, কেন্দ্রীয় সভাপতি, ভারত দিশম মাঝি মাডোয়া|
আদিবাসীদের জমি দখল করে অধিকাংশ কয়লা খাদান গড়ে উঠেছে| আসানসোলের কয়লা খাদানও অনেক আদিবাসীর জমি অধিগ্রহণ করে তৈরি হয়েছে| এটা Eastern Coal Fields Ltd (ECL) কতৃপক্ষ জানে, কেন্দ্রীয় সরকার জানে, রাজ্য সরকার জানে, শ্রমিক সংগঠনগুলি জানে|
ক্ষতিপূরণ হিসেবে আদিবাসীদের উন্নয়ন করার জন্য বা মুখ বন্ধ করার জন্য একটা Fund বা তহবিল করা হয়েছে, যে Fund বা তহবিল এর টাকা থেকে আদিবাসীদের উন্নয়ন করার কথা| এই Fund বা তহবিল এ টাকার পরিমাণ কম নয়, প্রায় কয়েক হাজার কোটি টাকা| কেন্দ্রীয় কয়লা মন্ত্রকের মোট বার্ষিক বাজেটের ৮.২%, কেন্দ্রীয় খনি মন্ত্রকের মোট বার্ষিক বাজেটের ৪%, এছাড়াও অন্যান্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রক থেকে এই Fund বা তহবিল এ টাকা জমা পড়ে| এই বিপুল পরিমাণ টাকা নির্ঘাত ভূতে খায়| এই বিপুল পরিমাণ টাকা আদিবাসীদের জন্য খরচ হলে আদিবাসী বেকার যুবকেরা সামান্য টাকা রোজগারের আশায় নিজেদের জীবন বিপন্ন করে অবৈধ কয়লা খাদানে নেমে নিজেদের প্রাণ হারাত না|
সম্প্রতি গত রবিবার ১৩/১০/২০১৯ পশ্চিম বর্ধমানের কুলটিতে ‘অবৈধ’ কয়লা খাদান কয়লা খুঁড়তে নেমে আটকা পড়েন কুলটির আকনবাগান গ্রামের তিন আদিবাসী যুবক – সন্তোষ মারান্ডি, বিনয় মুর্মু ও কালীচরণ কিস্কু|
পাঁচদিন পর তিন আদিবাসী যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার করে জাতীয় বিপর্জয় মোকাবিলা দল| দুদিন উদ্ধার কার্য বন্ধ ছিল| ভাবা যায় ? আদিবাসীদের জমি অধিগ্রহণ করেই তৈরি হয়েছে ECL এর কয়লা খাদান, আর সেই ECL কতৃপক্ষ নিরাপত্তার অজুহাতে আটক আদিবাসী যুবকদের উদ্ধার করতে রাজি হয়নি|
কয়েক বছর আগে অরবিন্দ কেজরিয়ালের দল আম আদমি পার্টি (AAP) কলকাতায় এসে অভিযোগ করেছিল যে কয়লা মন্ত্রক থেকে আদিবাসীদের উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ কয়েকশ কোটি টাকা অপব্যায় বা তছরুপ হয়েছে| ২০১৭ সাল থেকে আম আদমি পার্টি (AAP) এই অভিযোগ করে আসছে| কিন্তু কে কার কথা শোনে? আদিবাসীদের উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ টাকা নয়ছয় না করলে এক শ্রেণীর মানুষদের বিলাসিতা বা বাবুয়ানা কিকরে হবে|
NITI AYOG গঠন করার মানেটা কি? ২০১৭ সালে NITI AYOG নাকি আদিবাসীদের ও তপশীলি জাতি ভূক্ত মানুষদের উন্নয়নের জন্য ৪১ টি কেন্দ্রীয় মন্ত্রক কে “Development Action Plan for Scheduled Tribes (DAPST) ও Development Action Plan for Scheduled Castes (DAPSC)” Fund বা তহবিল এর জন্য টাকা জমা করতে বললেও সব মন্ত্রক নাকি টাকা জমা করেনি| আবার টাকা জমা হলেও সেই টাকা আদিবাসী ও তপশীলি জাতি ভুক্ত মানুষদের উন্নয়নে জন্য যে সঠিক ভাবে খরচ হচ্ছে না সেটা তো বোঝাই যাচ্ছে|
অবৈধ খাদান নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৫৭ সালের আইন The Mines and Minerals (Regulation and Development) Act কে ২০১৫ সালে সংশোধন করে কেন্দ্রীয় সরকার এবং আদিবাসীদের উন্নয়নের জন্য Fund বা তহবিলে খনি কোম্পানিদের টাকা জমা করা বাধ্যতামূলক করে, সে সরকারি বা বেসরকারি যেই কোম্পানি হোক না কেন|
কিন্তু এত কিছু করেও আদিবাসীরা শোষিত ও বঞ্চিত হচ্ছে| আদিবাসীদের উন্নয়নের জন্য গন্ডা গন্ডা Fund বা তহবিল হলেও আদিবাসীদের সেই টাকা নয়ছয় বা অপচয় হচ্ছে সেটা খনি এলাকার আদিবাসী গ্রাম ঘুরলেই বুঝতে পারা যায়| আদিবাসীদের উন্নয়নের জন্য গঠিত Fund বা তহবিল এর টাকা সঠিক ভাবে খরচ হলে গত রবিবার ১৩/১০/২০১৯ পশ্চিম বর্ধমানের কুলটিতে ‘অবৈধ’ কয়লা খাদান কয়লা খুঁড়তে নেমে কুলটির আকনবাগান গ্রামের তিন আদিবাসী যুবক – সন্তোষ মারান্ডি, বিনয় মুর্মু ও কালীচরণ কিস্কু কে অকালে মারা যেত না|
তথ্যসুত্র – ইন্টারনেট ও বিভিন্ন সংবাদ পোর্টাল|